পারমাণবিক বিদ্যুত্ উত্পাদনে ব্যবহার করা জ্বালানি ইউরেনিয়াম-২৩৫-এর পরিমাণ প্রচলিত জ্বালানি যেমন কয়লা বা ডিজেলের তুলনায় অনেক কম। তিন টন কয়লা বা দুই দশমিক ছয় টন তেল পুড়িয়ে যে শক্তি হবে এক গ্রাম ইউরেনিয়াম থেকে সেই শক্তি পাওয়া যাবে। পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জ্বালানি খরচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের খরচের এক-তৃতীয়াংশ আর গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের এক-পঞ্চমাংশ। এই কেন্দ্র স্থাপন করলে তার খরচ ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে উঠে আসবে। বিশ্বে প্রচলিত জ্বালানির চেয়ে পরমাণুর জ্বালানির মজুদ অনেক বেশি।
জাপানে পরমাণুতে বিদ্যুত্ উত্পাদন খরচ হয় প্রতি ইউনিট ৪ ডলার ৮০ সেন্ট। কয়লায় খরচ হয় ৪ ডলার ৯৫ সেন্ট ও গ্যাসে ৫ ডলার ২১ সেন্ট। কোরিয়ায় পরমাণুতে ২ ডলার ৩৪ সেন্ট, কয়লায় ২ ডলার ১৬ সেন্ট ও গ্যাসে ৪ ডলার ৬৫ সেন্ট। ফ্রান্সে পরমাণুতে ২ ডলার ৫৪ সেন্ট, কয়লায় ৩ ডলার ৩৩ সেন্ট ও গ্যাসে ৩ ডলার ৯২ সেন্ট।
২০০৭ সালের জুন মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত আটটি উন্নয়নশীল দেশকে এই বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে জাতিসংঘ। তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। সে সময় জাতিসংঘের আইএইএ বিভাগের দুইজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসেন। তারা কারিগরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করার আশ্বাস দেন। যে কোন দেশ ইচ্ছে করলেই পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে না। এজন্য জাতিসংঘের অনুমোদন লাগে।
বাংলাদেশে রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১৯৬১ সালে জমি ইজারা নিয়ে রাখা হয়েছিল। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন কারণে এই প্রকল্প এতদিন আগায়নি। কয়েকবার কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষার পর ১৯৬৩ সালে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২৬০ একর বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য এবং ৩২ একর আবাসিক এলাকার জন্য রাখা হয়। ১৯৮০ সালে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। পরে ১৯৯৯ সালে সরকার রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রটি ৬০০ মেগাওয়াট করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার এই রূপপুর প্রকল্পটিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্লান্টের সঙ্গে যুক্ত করে এবং এটি উন্নয়নের জন্য ২০০৫ সালে চীনের নিউক্লিয়ার করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে।
পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ২০০৯ সালের ১৩ মে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২১ মে রূপরেখা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ বছরের পহেলা আগস্ট মন্ত্রিসভা পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র সহযোগিতা চুক্তি অনুমোদন করে।