জীবনের বৃত্তান্তকে লিপিবদ্ধ করে কর্মক্ষেত্রে লক্ষ্যের দীপ্র ধনুক হয়ে এক টুকরো জানালার মতো নিজেকে মেলে ধরে সবাই। কখনো ব্যর্থ আবার কখনোবা সফলতার গান। হালে চাকরির বাজারে স্মার্টভাবে কতটা উপস্থাপন করা যায় নিজেকে সেদিকে ভাবনার অবকাশ যেমন আছে তেমনি আজীবন একই চিঠির প্রেরণের মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণার উপশম হওয়ার ইচ্ছেটা শুধু বুক পকেটে রাখলেই চলবে না, চাই যুগনির্ভর সিদ্ধান্ত। পায়ে পায়ে রাজপথ কিংবা ফুটপাত নয়, বা কানাগলির অন্ধকার স্যাঁতস্যাতে ঘরও নয়, তারুণ্যের পদতলে ঠেকেছে আজ কর্পোরেট অনেক চাকরির সম্মুখদ্বার। আর তাইতো সময়ের মুগ্ধ দাবি হয়েছে স্মার্ট সিভি.
আপাতদৃষ্টিতে খুব তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান বিষয়গুলোকে সাধারণজ্ঞান করার কোনো অবকাশ নেই সিভি’তে। শুরু করার পূর্বে বলে নেয়া ভালো যে, আপনার ক্যারিকুলাম ভিটা’য় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ঠেকবে প্রথমেই অভিজ্ঞতার ঝুলিগুলো। প্রথম দর্শনধারীতে অবশ্যই প্রোফাইল, সাফল্য, অভিজ্ঞতা, বিশেষ দক্ষতা (ভাষা, কম্পিউটার), শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং আগ্রহ- এই শাখাগুলোর প্রশাখা না বলতে চাইলেও শাখাসমূহের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিবরণ দেওয়া আবশ্যক। ক্যারিয়ার কিংবা পেশা জীবনের দীর্ঘ তালিকা না থাকলে স্মার্ট সিভি তৈরির ক্ষেত্রে মনে রাখাটা বাঞ্চনীয় হবে যে সিভিটা দুই পৃষ্ঠার অধিক যেন না হয়। কারণটা আর কিছুই নয় অনেক সিভি’র ভিড়ে আপনার সিভিটা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিটি সময় নিবে বড়জোর ২০-৩০ সেকেন্ড। তাই সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যনির্ভর সিভি আপনার চাকরির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
দর্শনধারী
চাকরিদাতা কর্তা মানুষটি সিভি’র মাধ্যমে দেখতে চায় আপনি কোন সেন্সের মানুষ এবং আপনি আসলে কি করতে পারেন। অর্থাত্ তারা দেখতে চায় আপনি কি সময়ানুবর্তী, সচেতন নাকি মোটিভেটেড? আপনি কি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেন? যাই লেখেন না কেন সিভি’তে, মনে রাখবেন সেটা আপনার কথা বলে কিনা। সিভি’কে জীবন্ত করে তুলতে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সহজ ভাষায় লেখা উচিত। তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার এ যুগে হাতে লেখা সিভি’র পরিবর্তে কম্পিউটার কম্পোজ করা সিভি’ই অধিক মানানসই। যে কোনো তথ্যই যথাযথ এবং যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করুন। সিভি’তে উপস্থাপিত তথ্য নির্ভুল এবং বাস্তবসম্মত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য সিভি লেখার পর মনোযোগ দিয়ে বেশ কয়েকবার পড়ে নিন। যেহেতু কর্তাব্যক্তিটি ২০-৩০ সেকেন্ড আপনার সিভিটি চোখের সম্মুখে মেলে ধরবেন তাই আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার মতো বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ফরম্যাটিং, অর্ডারিং এবং হেডিং’র মতো কৌশলের আশ্রয় নিতে পারেন। সিভি’তে একাধিক ফ্রন্ট ব্যবহার না করে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট ফ্রন্ট ব্যবহার করাই উত্তম। আর যদি বৈচিত্র্যের ভাবনা থাকে মনে তাহলে, এই ফ্রন্টকেই কখনো বোল্ড, কখনো ইটালিক আবার কখনোবা সাইজে বড়-ছোট করতে পারেন।
ছবি যেন কথা বলে
সিভি’র সাথে ছবি সংযুক্ত করার বিষয়ে সর্বোচ্চ ছ’মাস আগের ছবি ব্যবহার না করাই উত্তম। এই বিষয়ে যথাসম্ভব সতর্ক থাকা দরকার। আর সাদাকালো নয় রঙিন ছবিই এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে অনেক বেশি। আবার রঙিন মানে এই নয় যে, খুব বেশি রঙচঙা বা দৃষ্টিকটু পোশাকের ছড়াছড়ি। ছবির পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডকালার হালকা নীল কিংবা আকাশী হলে ভালো হয়। আবার ছবি তোলার সময় আপনার মুখটি যেন অবশ্যই পুরোপুরি সামনের দিকে ঘোরানো থাকে সেদিকে খেয়াল অবশ্যই রাখুন। সিভি’র সাথে ছবি সংযুক্ত করার প্রাক্কালে ছবির পেছন দিকটায় নিজের নাম লেখাটা যেন কখনোই বাদ না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে রঙিন জেমস ক্লিপ বা স্ট্যাপলার পিন দিয়ে উপরের কোণার ডান পাশে সংযুক্ত করে দিন। এক্ষেত্রে অবশ্য অনেকেই বা পাশে সংযুক্ত করার ইচ্ছে পোষণ করেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনার মুখের উপর যেন জেমস ক্লিপ বা স্ট্যাপলার পিনের কোনো অংশ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ঘটনার সামঞ্জস্যতা
প্রত্যেক চাকরির ক্ষেত্রে একটি সিভি ব্যবহার করা ঠিক নয়। দুই তিন ধরনের সিভি তৈরি করা উচিত। অথবা জব অনুযায়ী রিসেন্ট সিভি সাজানো উচিত। সেক্ষেত্রে চাকরির দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলোর অভিজ্ঞতাকে আলাদা আলাদা করে লিস্ট করতে হবে। সফলতা, দায়িত্ব এবং কর্মক্ষেত্রের ফলাফলেরও লিস্ট করতে হবে। সম্ভব হলে অ্যাচিভমেন্টগুলোকে পয়েন্ট আউট করে লিখতে হবে। যদি না কোনো প্রতিষ্ঠানে কভার লেটার পাঠানোর ক্ষেত্রে আপত্তি থাকে, তাহলে সব চাকরিতে কভার লেটার পাঠানোর অভ্যাস থাকা ভালো। এটা আপনার সিভি তৈরি অভিজ্ঞতাকে পরস্ফুিট করবে।
সিভি পাঠানোর খাম ও পে-অর্ডার
যে খামটায় সিভি পাঠাবেন তার মাপ ৯x৪ ইঞ্চি তেকে ১০.৫x৪.৫ ইঞ্চির মধ্যে হলে ভালো হয়। পাঠানোর ঘামটি সাদা, বাদামী বা হলুদ রঙের হতে পারে। তবে রঙিন বা এয়ার মেইল জাতীয় খামে পাঠানো উচিত নয়। সতর্কতার সঙ্গে সমান ভাঁজ করে নিতে হবে আপনার সিভিটি যাতে খামের ভেতর অনাকাঙ্খিতভাবে ভাঁজ হয়ে না থাকে। খামের ডান পাশে স্পষ্টাক্ষরে প্রাপক এবং বাম পাশে আবেদনকারী কিংবা প্রেরকের নাম লিখতে কালো কালির কলম ব্যবহার করাই ঠিক হবে। এতে স্পষ্টতা ও পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত নির্দিষ্ট ব্যাংকের পে-অর্ডারের ফর্ম সংগ্রহ করে সব তথ্য নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ফর্ম পূরণের পর বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত পে-অর্ডারের সমান টাকা এবং ব্যাংকের ফি-সহ টাকা জমা দেওয়ার রশিদ পূরণ করে নির্ধারিত ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিতে হবে। তা হলে পে-অর্ডারের টাকা ব্যাংকে আবেদনপত্র আহ্বানকারী প্রতিষ্ঠানের নামে জমা হয়ে যাবে। টাকাটি যখন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হবে তখন ব্যাংক থেকে একটি পে-অর্ডার রশিদ দেওয়া হয়। এই রশিদটি অবশ্যই আবেদন পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
নিজেকে প্রদর্শন করার জন্য এমন কিছু সিভি’তে লেখা উচিত নয়, যা আপনার মধ্যে নেই। নিজের সততা সিভি’র সর্বক্ষেত্রে উল্লেখ করার মধ্য দিয়েই জীবনে আসতে পারে সাফল্য।