বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১১



যৌবন আর কতদিন ধরে রাখা যায়? বয়স বাডে, বুডো হতে থাকে আমরা। অনিবার্য পরিনতি জীবনের। শরীরও বদলে যেতে থাকে। সব সময় যে এই বদলানো মানে অসুখ তাতো নয়, তবে অনেকে থমকে যান এই পরিবর্তন দেখে। বুডো হওয়া তো ঠেকানো যাবে না। তবে এসব পরিবর্তন সম্বন্ধে জানলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অভ্যস্থ হলে গোটা স্বাস্থ্যের উপর এসব পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে কম।

বয়সের ছাপ পড়ে ত্বকে:

বুডো হতে থাকলে ত্বকের নমনীয়তা কমতে থাকে, পাতলা হতে থাকে ত্বক, হতে থাকে ভঙ্গুর। অল্প আঘাতে চলেক যায় ত্বক, কালশিরে পড়ে যায়, ভাঁজ পড়ে ত্বকে, বয়সের ছাপ। ত্বকে স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাব কমে; তাই শুষ্ক হয় ত্বক এবং চুলকাতে থাকে মাঝে মাঝে।

হাড়, হাড়ের গিট ও পেশী:

হাড়ের ঘনত্ব হারাতে থাকে, আয়তন কুচকে যেতে থাকে, ভাঙ্গনের শিকার হয় সহসা। পেশিও কুচকে যায়, হয়ে যায় দুর্বল। স্বাভাবিক ক্ষয় হয় হাড়ের গিটের, ফুলে যায়, ব্যথা করে, নমনীয়তা যায় কমে।

সচলতা ও ভারসাম্য: বয়সের নানা পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে সফলতা ও ভারসাম্যের উপর। হাড়, হাড়ের গিট, পেশি, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রে বুড়িয়ে যাওয়ার কারণে হয় ভারসাম্যের সমস্যা। হঠাত্ পতন ঘটে; আরো হয় ক্ষতি, কালশিরে পড়া, হাড় ভাঙ্গা হতেই পারে।

দেহের অবয়ব:হাড় ও হাড়ের গিটে বয়সের পরিবর্তন পড়ার ফলে দেহের অবয়ব খাটো হয় কিছুটা, শিরদাড়াও একটু বেকে যায়, নুয়ে যায়। পেশি হারায়, চর্বির বিপাক কমে, মেদ পুন:বিতরণ হয় পেটে ও নিতম্বে। আদর্শ দেহ ওজন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

মুখমন্ডল: মুখেও পড়ে বয়সের ছাপ। কেবল কুঞ্চন রেখা বা বয়সের ছাপই নয়। সুখের পুরো অবয়বে হয় পরিবর্তন। মুখমন্ডলের হাড়ের আয়তন হ্রাস, মেদহ্রাস, ফলে ত্বক হয়ে পড়ে শিথিল, ঝুলে পড়ে কখনও। নেমে আসে মুখ, তলাটা হয়ে ভারি।

দাঁত ও মাড়ি:দুর্বল, ভঙ্গুর ও শুষ্ক হয়ে যায় দাঁতগুলো। লালাগ্রন্থি থেকে লালা ঝরা কমে যায়। মাড়ি আলগা হয়ে যায় দাঁত থেকে। মুখগহ্বর হয় শুকনো, ক্ষয় হতে থাকে দাঁত সংক্রমণ, বদবু হয় মুখে, দন্তহানি ও মাড়ির রোগ।

চুল ও নখ: বুড়িয়ে গেলে কেশ হয় পাতলা, হয় দুর্বল। শুষ্ক চুল চুলকায় দারুন, অস্বস্তিও হয়। নখ হয় ভঙ্গুর, বেঢপ গড়ন। শুষ্ক হয় নখ, খাড়া খাড়া দাগ গড়ে নখে। পায়ের নখ পুরু হয়। নখের হয় প্রায়স; ছত্রাক সংক্রমণ।

হরমোন ও আন্ত:গ্রাবী গ্রন্থি: বয়স্কদের মধ্যে হরমোন পরিবর্তন দেখা যায় সচরাচর। বেশি দেখা যায়, রক্তের সুগারের হরমোন নিয়ন্ত্রণে ক্রটি, ফলে ডায়াবেটিস। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা এবং চর্বি ও কোলেস্টেরল বিপাকে সমস্যাও দেখা যায় প্রায়ই। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি বিপাকে ঘটে পরিবর্তন। যৌন হরমোন মান যায় কমে, নিম্নদেশের উত্থান সমস্যা, স্ত্রীযৌনি শুষ্ক হওয়া এসব বার্ধ্যক্যের অনুসঙ্গ।

স্মৃতিশক্তি:স্মৃতিশক্তির সমস্যা বুড়োদের মধ্যে বেশ দেখা যায়। তবে সামান্য স্মৃতি দুর্বল হওয়া মানে ডিমেনাশিয়া বা আল্ঝাইমার রোগ নয়। সামান্য স্মৃতি সমস্যা যেমন কোথায় চাবি রাখলাম মনে করতে না পারা, বা দরজায় তালা দিলাম কিনা মনে করতে না পারা’ স্বাভাবিক বার্ধক্যের চিহ্নও বটে।

দেহপ্রতিরোধ শক্তি: বয়সের সঙ্গে দেহ প্রতিরোধ বা ইম্যুন ব্যবস্থা দুর্বল হতে থাকে, যে রক্ত কনিকা লড়াই করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে, সেই শ্বেতকণিকারা বারবার সংক্রমণের জন্য দুর্বলই হতে থাকে।

শ্রুতিশক্তি: শ্রুতিস্নায়ুতে পরিবর্তন হয়, দুর্বল হয়ে পড়ে শ্রুতিশক্তি, বার্ধক্যজনিত শ্রুতিহানি ঘটে, উচু ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ শোনা কঠিন হয়ে পড়ে।

দৃষ্টি শক্তি: চোখ হয়ে পড়ে শুষ্ক; লেনসের নির্ভুল কর্মদক্ষতা থাকেনা; এসব পরিবর্তে দৃষ্টি শক্তিতে ঘটে ক্রটি, ঝাপসা হতে পারে দৃষ্টি, আউট অব ফোকাস। সেজন্য চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স হতে পারে প্রয়োজন।

স্বাদ ও গন্ধ চেতনা:গন্ধ চেতনাও এমনকি স্বাদ চেতনাও একটু ফিকে হয়ে যেতে পারে, ক্ষুধাকম, ওজন হ্রাস এজন্য।

পাচকনালী ও মূত্রাশয়: এদুটোর নিয়ন্ত্রণ হতে পারে দুর্বল, এজন্য ইনকনিটনেন্স, অসংযম, মল ও মূত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে, অনিদ্রাসত্বেও এদের নিষ্ক্রমন ঘটতে পারে। পরিবর্তন হতে পারে মল ও মূত্রত্যাগের অভ্যাসে। কখনও কোষ্টবদ্ধতা, বারবার প্রস্রাব। প্রস্রাব সূচনায় সমস্যা।

ঘুম: বুড়িয়ে গেলে ঘুমের ধরণ বেশ পালটে যায়। ঘুমের কাল, গুণগতমান, রাতে ঘুম থেকে উঠা, বুড়োদের বেশ হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন