বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১১

শিশুদের পুষ্টি



বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা খুবই নাজুক। শিশুর জম্মের পর প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ-ই সর্বোত্কৃষ্ট। এরপর শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির হার দ্রুত হয়। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পূর্ণ ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দেয়া প্রয়োজন। যেমন নরম ভাত, সেদ্ধ করা চটকানো মাছ-মাংস, ফলের রস, চটকানো আলু, চটকানো শাক-সবজি, ডিমের কুসুম, বিভিন্ন প্রকার হালুয়া, পাকা কলা ইত্যাদি।

খাদ্যের ছয়টি উপাদান যেমন-শর্করা, লেহ, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। শর্করা জাতীয় খাবার যেমন-চালেরগুড়া, চাল, সুজি, আটা, রুটি, ভাতের মাড়, আলু সিদ্ধ, ক্ষীর, সেমাই, পায়েস ইত্যাদিতে গুড়, চিনি মিশিয়ে খাবার নরম ও পাতলা করে শিশুদেরকে দেয়া যায়। এ সব খাবার শরীরে শক্তি যোগায়। আমিষ জাতীয় খাবার যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, ডিমের পুডিং, ডাল, সীমের বিচি, বাদাম ইত্যাদি খাবার সেদ্ধ ও পিষে নরম করে শিশুদের খাওয়ানো যায়। ভিটামিন ও খনিজ লবণ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে পাকা আম, পাকা কলা, পাকা পেপেঁ, আপেল, কমলা, মাল্টা, জাম ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন শাক-সবজি যেমন- লাল শাক, পালং শাক, কাঁচ কলা, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, ফুলকপি, মটরশুটি, বরবটি, টমেটো ইত্যাদি তৈল দিয়ে সেদ্ধ করে চটকে শিশুদের খাওয়ানো যায়। শিশুদেরকে ছয় মাস বয়স থেকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি নিরাপদ ফুটানো পানি ও পানি জাতীয় ফল যেমন-কমলা, ডালিম, মাল্টা, জামরুল, আংগুর ইত্যাদি ও মৌসুমি বিভিন্ন ফলের রস দেয়া যায়। শিশুর খাদ্যে তৈল এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অন্যান্য খাদ্যের সাথে তেলের মিশ্রণের ফলে বাড়তি শক্তি, স্বাদ, আমিষ, লেহ এবং ভিটামিন এ ও ডি এর চাহিদা মেটায়।

শিশুদেরকে যেভাবে পরিপূরক খাবার দিবেন: প্রথমে ১-২ চামচ করে স্যুপ, ফলের রসের সাথে সমপরিমাণ বিশুদ্ধ ফুটানো পানি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। পরবর্তীতে পানি বাদ দিয়ে রসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিনে ২ বার করে খাওয়াতে হবে। পরিপূরক খাবার শুরু করার সময় প্রথমে নরম করে তরল, আধা-তরল অভ্যাস হয়ে গেলে আধাশক্ত থেকে শক্ত খাবার দিতে হবে। যেমন ফল দেবার এক সপ্তাহ পর ১-২ চামচ করে দিনে ২ বার দুধের সাথে সুজি বা চালের গুড়া, গুড় ইত্যাদি মিশিয়ে নরম করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। শস্য দেবার এক সপ্তাহ পর ১ চা চামচ করে নরম সেদ্ধ ডিমের কুসুম দেয়া যাবে। ডিম দেবার ১ সপ্তাহ পর ১-২ চামচ করে দিনে ২ বার শাক-সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া, আলু, লাল শাক ইত্যাদি সেদ্ধ করে চটকিয়ে নরম করে খাওয়াতে হবে। সবজি দেয়ার এক সপ্তাহ পর চাল, ডাল, আলু, শাক-সবজি খিচুড়ী নরম করে খাওয়াতে হবে। খিচুড়ী দেবার এক সপ্তাহ পর ১-২ চামচ করে দিনে ১ বার কলিজা, মাংস ইত্যাদি সেদ্ধ করে পিষে খাওয়াতে হবে। হুট করে কোন খাবার দেয়া যাবে না। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে গেলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। সহজলভ্য এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবারের খাদ্য থেকে খাওয়াতে হবে। জোর করে শিশুদেরকে খাওয়াতে গেলে হিতে বিপরীত হয়।

কোন বয়সে কত বার পরিপূরক খাবার খাওয়াতে হবে- যেমন ৬-৭ মাস বয়সে দিনে ২ বার; ৭-৮ মাস বয়সে দিনে ৩ বার; ৯-১২ মাস বয়সে দিনে ৪ বার; ১-২ বত্সর বয়সে কমপক্ষে ৫/৬ বার পরিপূরক খাবার খাওয়ানো যাবে। শিশু অপুষ্টিতে ভূগলে বাড়তি পরিপূরক খাবার দেয়া প্রয়োজন। ২ বত্সর পর্যন্ত পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। হঠাত্ করে মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। এক বত্সর বয়স থেকে শিশুদেরকে নিজের হাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করলে ভাল হয়। পরিপূরক খাবার তৈরী করার সময় মনে রাখতে হবে, প্রথমে সহজে তৈরী করা যায় এমন খাবার অল্প করে পাতলা ও নরম করে ১-২ চা চামচ করে খাওয়াতে হবে। সহজে হজম হয় এমন খাবার দিতে হবে। প্রথমে কোন খাবার দিতে হলে দুধ খাওয়ানোর কিছু আগে দিতে হবে। অল্প খাবার অধিক শক্তি যোগায় এমন খাবার দিতে হবে, যেমন- তেল, গুড় বা চিনি। মৌসুম অনুযায়ী টাটকা ও তাজা খাবার দিতে হবে। শিশু পরিমাণে কম খায় । তাই অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে। এলার্জি ও ডায়রিয়া হলে নির্দিষ্ট কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। শিশুর পছন্দ অনুযায়ী খাবার দিতে হবে। খাবারের সাথে নিরাপদ বিশুদ্ধ ফুটানো পানি বোতল করে না দিয়ে চামচ বা কাপ/বাটি দিয়ে দিতে হবে। শিশুকে খাওয়ানোর সময় ধৈর্য্য সহকারে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শিশুকে জোর করে খাওয়ানো যাবে না। হাসিখুশি পরিবেশে গল্প করে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। শিশুর খাবার তৈরী করার সময় হাত ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। শিশুর ব্যবহূত হাড়ি-পাতিল, থালা বাসন, চামুচ, গ্লাস ইত্যাদি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানিতে ধূয়ে নিতে হবে। খাবার খোলা রাখা যাবে না। মশা, মাছি, ধূলা-বালি না পরতে পারে এমন মত করে ঢেকে রাখতে হবে। রান্না করা খাবার ২ ঘন্টার মধ্যে না খাওয়ালে তবে সে খাবার আবার ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে। উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিশুকে সংক্রামক রোগ, কৃমি রোগ ইত্যাদি থেকে নিরাপদ রাখে। সুস্থ দেহের সুস্থ মন শিশু থাকবে হাস্যেজ্জল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন