বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১১

পরোক্ষ ধূমপান


ধূমপায়ী   ধূমপান  করে  শ্বাস ছাড়ার সময় বেশ  ধোঁয়া  ছেড়ে  দেন  বাতাসে।  সেই ধোঁয়ার সঙ্গে যোগ হয় সিগারেট জ্বলার সময় সিগারেট থেকে সরাসরি নির্গত ধোঁয়া। ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা অধূমপায়ী লোকের শরীরে এই ধোঁয়া ঢুকে যায় শ্বাসের মাধ্যমে। তাদের অনিচ্ছা সত্বেও। এটাই পরোক্ষ ধূমপান। পরোক্ষ ধূমপান হতে পারে বাসাবাড়িতে। বাবা ধূমপান করছেন, পাশে সন্তানরা। হতে পারে অফিসে বা কর্মস্থলে। আপনি ধূমপান করছেন না, কিন্তু পাশের সহকর্মী করছেন। হতে পারে রেস্টুরেন্টে, যানবাহনে, বাজারে এবং জনসমাগম হয় এরূপ অন্যান্য স্থানে। 
ধূমপায়ীর ছেড়ে দেওয়া ধোঁয়া এবং জ্বলন্ত সিগারেট থেকে সরাসরি নির্গত ধোঁয়া - এই দুই  ধোঁয়ার মাধ্যমে তামাকে থাকা সকল বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থই বাতাসে ছড়িয়ে যায়। শ্বাসের মাধ্যমে ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা অধূমপায়ীর শরীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ পবেশ করে। কারণ হয়ে দাঁড়ায় অধূমপায়ীর শরীরে সমূহ ক্ষতির।
পরোক্ষ ধূমপান প্রত্যক্ষ ধূমপানের মতই ক্ষতিকর। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সাথে সাথেই কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের এলার্জি বেশি, তাদের এলার্জির লক্ষণ বেড়ে যেতে পারে। যেমন হাঁচি আসা, কাশি হওয়া, চোখ জ্বলা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, নাক ঝরা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, মাথা ঘোরা, ইত্যাদি। যাদের হাঁপানি আছে, তাঁদের হাঁপানির এটাক হতে পারে, শ্বাস কষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
পরোক্ষ ধূমপানের জন্য দীর্ঘদিন পরেও শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা অবশ্য নির্ভর করবে একজন কী হারে এবং কতদিন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে তার উপর। দীর্ঘদিন পরোক্ষ ধূমপান করলে কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে?  হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার, হূদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন, গর্ভপাত, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি, ইত্যাদি। দেখা গেছে, বসাবাড়িতে ধূমপান করলে বাড়ির অধূমপায়ী সদস্যদের পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপায়ীদের এই সম্ভাবনাও প্রায় ২০ শতাংশ। বাসাবাড়িতে পরোক্ষ ধূমপায়ী শিশুদের হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি। অন্যান্য এলার্জি হবার আশংকাও যথেষ্ট। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্বাস নালীর বা ফুসফুসের ইনফেকশন হবার সম্ভাবনাও বেশি। সুতরাং পরোক্ষ ধূমপানের প্রশ্নে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের কথা একটু বেশিই মনে রাখতে হবে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার অধূমপায়ী ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায় এবং প্রায় ৩ লাখ শিশু শ্বাসনালী বা ফুসফুসের রোগে ভোগে।
সুতরাং যারা সরাসরি ধূমপান করেন না, তাদেরকে পরোক্ষভাবে ধূমপান করিয়ে তাদের শরীরের ক্ষতি করা কোন মতেই কাম্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন