পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিনগুলির মধ্যে ভিটামিন সি অন্যতম। এর বৈজ্ঞানিক নাম এসকরবিক এসিড। মানবদেহে এই ভিটামিন সংশ্লেষিত হয় না এবং এর কার্যকারিতা ২৪ ঘন্টার বেশি থাকে না। এই কারণে প্রতিদিনই এই ভিটামিন কিছু না কিছু গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভিটামিন সি দেহে কাজ করবার জন্য পরিপাক বা বিপাকের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। এটা সহজেই অন্ত্র হতে শোষিত হয়ে দেহের ভিতরে শোষ কলায় পৌছে তাদের কাজ করে থাকে।
এই ভিটামিনের কাজ হলো দাঁত, হাঁড়, কোষের সংযোজনে অংশ গ্রহণ করা এবং দেহের ক্ষত বা ঘা সারাতে সাহায্য করা। এই ভিটামিন লৌহ শোষণে সাহায্য করে বলে লৌহ জাতীয় খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি গ্রহণ করা জরুরী। এতে রক্তস্বল্পতা রোধ করা যায়। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন যক্ষ্মা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডিপথেরিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ ইত্যাদিতে ভিটামিন সি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে সবল করে থাকে। এই ভিটামিনকে ডায়েটারী এইড বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের সাহায্যকারী হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ এটি মিষ্টি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমায় এবং ক্ষুধাবোধকে দমন করে। ফলে রক্তে চর্বি ও শর্করার মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের উপর এই ভিটামিন এত ভাল কাজ করে যে বিভিন্ন চর্মরোগ সারাতে এর প্রয়োজন। ভিটামিন সি দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে। এটি শরীরের ফ্রি রেডিকেলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং সেল মেমজেন বা কোষ প্রাচীরে আলফা টকোফেরল অর্থাত্ ভিটামিন ই সি:সরণে সাহায্য করে।
সাধারণত: সবুজ শাক-সবজি ও টক ফলে ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকিতে রয়েছে সবচাইতে বেশি। এছাড়া লেবু, পেয়ারা, কমলা, বেল, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, সজনে পাতা, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। চাহিদামতো এই ভিটামিন গ্রহণ করা গেলে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা যায়। পানিতে দ্রবনীয় বলে শাক-সবজি পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিলে বা সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিলে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ পর্যন্ত সি ভিটামিন নষ্ট হয়। তাপে সংবেদনশীল বলে অনেকক্ষণ খোলা কড়াইতে রান্না করলে অথবা শাক-সবজি ও ফল ৫-৭ দিন ঘরে রেখে দিলেও শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত ভিটামিন ক্ষয় হয়। আবার রান্না করা তরকারি চুলায় বসিয়ে রাখলে বা বারে বারে গরম করলেও সি-ভিটামিন নষ্ট হয়।
ফ্রিজে রাখা সবজি ও ফলের ভিটামিন নষ্ট হয় খুবই কম। আবার সবজি ও ফলে সামান্য চিনি মেশালে সি-ভিটামিন অনেকটা রক্ষা পায়। এজন্য সালাদ ও নিরামিষে সামান্য চিনি দিলে এর স্বাদ যেমন বাড়ে তেমনি ভিটামিন সিও নষ্ট হয় না।
ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ হয়। এতে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ হয়, দুর্বলতা ও শিশুদের হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয় ও ফুলে যায়। অনেক সময় চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণ হয়ে বলে চামড়ার উপরে নীলচে রঙ দেখা যায়।
সুতরাং দেখা যায় যে, মানবদেহে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এখনও প্রতিদিনই কিছু না কিছু ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন