মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১১

ইন্টারনেট আসক্তি

ইন্টারনেট আসক্তরা সাধারণত প্রথমে বুঝতে পারে না অথবা স্বীকার করতে চায় না তারা আসক্ত। কিন্তু আশপাশের মানুষ টের পায়। আসক্ত ব্যক্তি প্রায় প্রতিদিনই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ইন্টারনেটে বসার পর সময়জ্ঞান থাকে না কখন ঘণ্টা পেরিয়ে যায়! ভার্চুয়াল জগতে থাকাকালে বাস্তবের কেউ যদি ওই সময়ে ভাগ বসায়, ধরুন, পরিবারের কেউ কথা বলতে আসেন বা মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে, তাহলে আসক্ত ব্যক্তির মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ওঠে। ফেসবুক, টুইটার, মাইস্পেসের মতো আন্তর্জাতিক সামাজিক ওয়েবসাইটগুলোতে তার সরব পদচারণা; 'অনলাইন' বন্ধুরাই হয়ে ওঠে প্রিয় সঙ্গী। ইন্টারনেটে এই বাড়াবাড়ি রকমের সময় ক্ষেপণকে এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন 'আসক্তি'। অ্যাডিকশন বা আসক্তি একটি ব্যাধি। ইন্টারনেটের কারণে ব্যক্তির এই পরিবর্তন কি ব্যাধি? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পনক্ষ্ম অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর মতে তাই। আসক্তি আমরা তখন বলি, তখন মানুষ কোনো কিছুতে, সেটা ভালো-মন্দ যাই হোক, অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে অর্থাৎ কোনো কিছুর প্রতি ডিপেনডেন্স তৈরি হয়। একইসঙ্গে তৈরি হয় টলারেন্স, অর্থাৎ একই সমান তৃপ্তির জন্য ধীরে ধীরে ওই 'কিছু'র পরিমাণ বাড়াতে হয় এবং সেই কিছুর প্রতি এই ডিপেনডেন্স এবং টলারেন্স যখন মানুষের জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে থাকে। যেমন, আমরা বলে থাকি মাদকাসক্তির কথা। একই ঘটনা আমরা দেখতে পাই ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও। ইন্টারনেট আসক্তদেরও তৈরি হয় 'টলারেন্স'। প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়তে থাকে ইন্টারনেটে কাটানো সময়ের পরিমাণ। মানসিকভাবে এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তারা। বেশিক্ষণ অফলাইন থাকলে তাদের মাঝে অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়, মাদকাসক্তদের যেমন কয়েক ঘণ্টা মাদক না নিলে দেখা দেয় শারীরিক-মানসিক নানা উপসর্গ বা 'উইথড্রল সিম্পটম', চলতি বাংলায় আসক্তরা যাকে বলে 'ব্যাড়া ওঠা'। মাদক আবার গ্রহণ করলেই যেমন উইথড্রল সিম্পটম চলে যায়, ইন্টারনেট আসক্তরাও অনলাইন হলেই স্বস্তিবোধ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিষণক্ষ্মতা, উদ্বেগ, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার প্রভৃতি রোগে ভোগেন তাদের আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একাকিত্ব, অসুখী দাম্পত্য, পেশাগত চাপ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, কর্মহীনতা, শারীরিক আকৃতি নিয়ে হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাসের অভাবও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে আসক্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। অনেকে অন্য আসক্তি, যেমন মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত হতে গিয়ে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ে। আসক্তির প্রকৃতি গুরুতর না হলে নিজ প্রচেষ্টায়ই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনি যে আসক্ত এ ব্যাপারটি আপনাকে অনুধাবন করতে হবে। এরপর দেখুন, এই আসক্তির ফলে আপনি জীবনে কী হারাচ্ছেন বা মিস করছেন। 'মিস করা' বিষয়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। বাস্তবে আপনার বন্ধুসংখ্যা যত বাড়বে, তত ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুত্বের প্রয়োজন পড়বে কম। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন