ভাত ও মাছ আমাদের প্রধান খাদ্য। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালী। মাছ খুবই সুস্বাদু। আমিষ, তেল, ভিটামিন ও খনিজ লবণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স হচ্ছে মাছ। মাছের প্রায় ২০ শতাংশ আমিষ। প্রথম শ্রেণীর আমিষ। এতে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের সবগুলোই উপস্থিত। মাছের আমিষের প্রায় সবটুকুই হজম হয়, প্রায় ৮৫-৯৫ শতাংশ। মাছে আমিষ বেশি, তেল তুলনামূলকভাবে কম। যা আছে তার বেশীর ভাগই পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মাছে আছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ। ভিটামিন ‘এ’ আছে রেটিনল হিসাবে, যা আমাদের শরীরে সহজেই ব্যবহূত হতে পারে। কোন কোন ছোট মাছে ভিটামিন ‘এ’ এর পরিমাণ বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম মলা মাছে প্রায় ১৯৬০ মাইক্রোগ্রাম আর ঢেলা মাছে প্রায় ৯৩৭ মাইক্রোগ্রাম। পক্ষান্তরে, ইলিশের প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ৬৯ ও রুইয়ে ২৭ মাইক্রোগ্রাম। মাছের কাটায় আছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস নামক খনিজ লবণ। ছোট মাছ কাটা সহ খাওয়া যায় বলে আমরা এগুলো থেকে বেশি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পেয়ে থাকি।
আমরা মাছে-ভাতে বাঙালী বলে মাছের আমিষ আমাদের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা মেটাতে পারে। মাছের তেলের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি হূদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস বা বাত, আলজেইমারস ডিজিজ বা বুড়ো বয়সে ভুলো মন, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। প্রতিরোধ করতে পারে শিশুদের হাঁপানি, মহিলাদের স্তন ও পুরুষদের প্রষ্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার। এটি রক্তের কলেস্টেরল কমায়। শরীরের বাড়তি ওজন কমাতেও সহায়ক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। মেনুপজাল বা পঞ্চাশোর্ধ মহিলাদের মুড ভাল রাখতেও এটি কার্যকর। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শিশুদের মস্তিস্ক ও চোখের রেটিনার কর্ম উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থাকে নয় মাসের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতেও ভূমিকা রাখে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন সপ্তাহে অন্তত দুইবার মাছ খাওয়ার পক্ষে। এতে করে শিশুর হাঁপানি থেকে শুরু করে বড়দের প্রষ্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কমে। মায়েরা মাছ খেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বুকের দুধের মাধ্যমে দুগ্ধ পোষ্য শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এতে শিশুর দৃষ্টি শক্তি ভাল হয়, মস্তিস্কের ডেভেলপমেন্ট উন্নত হয়।
বোস্টনের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেল্থ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে মোটামুটি পরিমাণ মাছ খেলে হূদরোগের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি ৩৬ শতাংশ কমে। আর যে কোন কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমে প্রায় ১৭ শতাংশ। গবেষণার ফলাফলটি প্রকাশিত হয় আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের অক্টোবর ২০০৬ এর জার্ণালে। গবেষণাটির মতে, সপ্তাহে অন্তত ১ থেকে ২ বার মাছ খাওয়া উচিত্ - বলেন জার্নালের গবেষক ডাঃ দারিয়ুস মোজাফ্ফারিন। মাছের ভিটামিন এ চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী। উপকারী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসাবেও। আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁতের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন